আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: সরাইলের পারভেজ মিয়া। পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রী এখন তিনি লাখ লাখ টাকার মালিক। তার বাবা করাত মিল শ্রমিকের কাজ করে একমাত্র ছেলে হিসেবে অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলেছেন। এত কষ্টের মাঝে থেকেও তিনি জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসার সাথে। ধীরে ধীরে তিনি বনে যান বড় মাদক কারবারি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাবলীপাড়া গ্রামের লাল মিয়াপাড়ার বাসিন্দা রৌশন আলীর ছেলে পারভেজ একসময় কাঠমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন। প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী নেতার বদৌলতে তিনি রাজনৈতিক দল বিএনপির ছাত্রদলে যোগ দেন। পরে কৌশলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি এখন শাহবাজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
সরাইল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু এ প্রতিবেদককে বলেন, শাহবাজপুর যুবলীগের মূল ধারার কমিটিতে পারভেজ মিয়ার সম্পৃক্ততা নেই। ওইখানে যুবলীগের একটি বিতর্কিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে পারভেজ মাদক ব্যবসা ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শাহবাজপুর সেতুতে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বলে ওই এলাকার নেতাকর্মীরা উপজেলা কমিটিকে জানিয়েছেন। পরে বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিয়ে এর সত্যতা পাই। পারভেজ যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি মহাসড়কে চাঁদাবাজি করছে। এতে এখানে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম কালন বলেন, পারভেজ একজন কাঠমিস্ত্রী। তার বাবা ছিলেন শ্রমিক। সে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে এখানে বীরদর্পে ইয়াবা ব্যবসা করছে। মহাসড়কে করছে চাঁদাবাজি। তার এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাইল থানার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়ার সম্পৃক্ততা আছে। পারভেজ এখানকার মাদক সিন্ডিকেটের ‘ডন’। ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া এখানকার মাদক ব্যবসার পার্টনার। এই ওসি’র মদদে পারভেজ চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করছে।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বলেন, পারভেজ মিয়া ছাত্রদল করতো। বিএনপির দলীয় সকল কর্মকান্ডে সে সক্রিয় ছিল। সে ছিল কাঠমিস্ত্রী। সে হাইস্কুলে পড়ালেখা করেছে কিনা সন্দেহ আছে। এখন সে যুবলীগ নেতা। তার অত্যাচারে এখানকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা এখন তার পেশা। সে নিজেও মাদকাসক্ত।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ রানা রুবেল বলেন, নব্য যুবলীগ নেতা পারভেজ ও তার অনুসারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে এখানে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ধ্বংসের পথে। পারভেজ ও তার দলবলের চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার কারণে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। আমরা যখন রাতে ঘুমাই পারভেজ ও তার অনুসারীরা রাতভর এলাকা চষে বেড়ায়। তারা রাতে ঘুরে, দিনে ঘুমায়। এলাকার মানুষ পারভেজ ও তার অনুসারী মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পরিত্রাণ চায়।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শাহবাজপুর এলাকার বাসিন্দা এ কে এম বাবুল হক বলেন, পারভেজ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। সে একজন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত। যুবলীগ নেতা পরিচয়ে সে এখানে নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
শাহবাজপুর ইউনিয়ন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতুতে চাঁদাবাজির ঘটনায় যুবলীগ নেতা পারভেজ জড়িত। পুলিশের তালিকায় তার নাম আছে। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে।
এ বিষয়ে জানতে সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সরাইল থানার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, পারভেজ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে সে ছেলে হিসেবে তেমন ভালো না, এ বিষয়টি আমি স্থানীয় লোকজনদের মুখে শুনেছি। পারভেজের সঙ্গে আমার ব্যাপারে যেই অভিযোগ আনা হয়েছে, এর একটিরও সত্যতা নেই। আমি আগামিকাল বদলিজনিত কারণে সরাইল থেকে চলে যাচ্ছি। আমি এখানে মাদক কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি।
এ ব্যাপারে সোমবার রাতে মুঠোফোনে শাহবাজপুর এলাকার যুবলীগ নেতা পারভেজ মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন, তারা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এখানকার যুবলীগের পুরাতন নিশ্ক্রিয় কমিটির কয়েকজন নেতা শাহবাজপুর সেতুতে পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করেছে। আমি এসব চাঁদাবাজির ব্যাপারে ওসি মফিজ ভাইকে নিয়মিত জানিয়ে আসছি। আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম। এখন যুবলীগের সেক্রেটারি। আমি আওয়ামী ঘরানার সন্তান। কখনোই বিএনপি বা ছাত্রদল করিনি। আমি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।