স্থানীয় মসজিদের ঈমাম ও উপস্থিত স্বাক্ষীদের উদ্দেশ্যে সোনিয়া এ বিয়েতে “কবুল” বললেও পাশের ঘরে ফিরে বিয়ের কাজী ও মৌলভী গিয়ে দেখতে পান বর ছাব্বির পালিয়েছে। পরে ছাব্বিরের পরিবার সোনিয়াকে এই বাড়ি থেকে বের করতে পুলিশের সহায়তা নিয়েও ব্যর্থ হন। এখানে টানা দুইদিন অনশন করলেও ছাব্বির বাড়িতে না ফেরায় বিমূখ হয়ে সোনিয়া পাশেই পিতার বাড়িতে ফিরে আসে এবং সোনিয়ার পিতা লিল মিয়া বাদী হয়ে ছাব্বির সহ তিনজনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এলাকার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এই মুখরোচক ঘটনাটি অবগত।
নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী বলেন, সোনিয়া এবং ছাব্বিরের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক চাচা ও ভাতিজি। তাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্যও বহু ব্যবধান। সোনিয়ার বয়স ২১ বছর এবং ছাব্বিরের বয়স ১৪ বছর। সোনিয়া বিবাহিত তার স্বামী বিদেশ প্রবাসী। তাদের মধ্যে অসম প্রেম বা পরকিয়ার ঘটনা, তবে সেখানে কোন অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। তাদের পাশাপাশি বাড়ি। প্রেমের টানে সোনিয়া পিতার বাড়ি ছেড়ে ছাব্বিরের বাড়িতে চলে আসে। গ্রামের সালিশকারকদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে পড়ানোর মূহুর্তে ছাব্বির পালিয়ে যায়।
ইসলামাবাদ গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ সোলমান মিয়া এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একবছর আগে সোনিয়াকে জেলার বিজয়নগর উপজেলার আবদুল্লাহপুর গ্রামের প্রবাসী এনামুল হকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ফিরে সোনিয়া পিতার বাড়িতেই অবস্থান করে। গত ২৮ মার্চ সোনিয়া গ্রামের লাকী মিয়ার ছেলে ছাব্বিরের বাড়িতে চলে আসে। তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেদিন সালিশে তাদের দু’জনের বিয়ের রায় হয়। বিয়েতে সোনিয়া কবুল বললেও ছাব্বির পালিয়ে যায়। সোনিয়া ও ছাব্বিরের মধ্যে ভাতিজি ও চাচার সম্পর্ক হলেও অন্য এক সম্পর্কে তারা দু’জনে ভাই-বোন। সোনিয়া বর্তমানে পিতার বাড়িতে রয়েছে।
এদিকে সোনিয়ার পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, ছাব্বির সহ তিনজন মিলে সোনিয়াকে গত ২৮ মার্চ ভোরে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ছাব্বির নিজ বাড়িতে দুইদিন সোনিয়াকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরদিকে ছাব্বিরের পরিবার জানায়, বিবাহিত সোনিয়া তার চেয়ে বয়সে সাত বছরের ছোট চাচা ছাব্বিরকে স্বামী হিসেবে পেতেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন মিথ্যা অপরহরণ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক ও এ মামলার তদন্তকারী অফিসার মোঃ শাহ কামাল সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় সোনিয়ার বাবা লিল মিয়া বাদী হয়ে গত ২ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে ছাব্বির সহ ইসলামাবাদ গ্রামের হাজারী মিয়ার ছেলে উজ্বল ও মৃত মোবারক মিয়ার ছেলে এন্তা মিয়াকে। আসামি এন্তা মিয়া বর্তমানে জেলহাজতে আছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।